১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে তৎকালীন সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হয়ে ওঠে অর্থনীতিকে দাঁড় করানো এবং এর পূর্নগঠন । এসময় দেশের মানুষের নির্ভরতা ছিল মুলতঃ কৃষি খাতের উপর । ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় যেখানে কৃষি খাতের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয় । এ সময় পঞ্চবাষিকী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি অথনৈতিক পূর্নগঠন প্রক্রিয়ায় একটি সমর্থনমূলক আর্থিক এবং ব্যাংকিং খাত প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরী হয়ে ওঠে এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল চার নীতির ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণ করা হয় । বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্থাপনের মধ্য দিয়ে আর্থিক খাত পূর্নগঠনের শুরু এবং অর্থায়নের যাত্রা যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে অর্থায়ন সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, অর্থনৈতিক পূর্নগঠনের প্রথম থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তৎকালীন সরকার কৃষি ঋণ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে । এ কাজের জন্য ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২’ এ একটি কৃষি ঋণ বিভাগ স্থাপনের কথা বলা হয় এবং এ সময়ে পল্লী ঋণ সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘গ্রামীণ ঋণ প্রকল্প বিভাগ’ নামে একটি বিভাগ খোলা হয়। পরবর্তীতে এর সাথে সঙ্গতি রেখে ‘কৃষি ঋণ তদারকী বিভাগ’ও স্থাপন করা হয় । তৎকালীন সরকার কৃষি ঋণের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে ঋণ প্রদানে সরাসরি অংশ নেয় । ১৯৭২-৭৩ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনঃঅর্থায়নের সুবিধা প্রদান শুরু করে। সত্তরের দশকের ব্যাংকিং এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বিশেষায়িত ব্যাংক অর্থাৎ বিশেষ লক্ষ্য সামনে রেখে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষক এবং জেলেদের মাঝে ঋণের প্রবাহ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের কৃষি ও গ্রামীণ খাতের উন্নয়নে ১৯৭৩ সালে একটি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের বলে কৃষি খাতের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রকৃত পক্ষে সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কৃষি ব্যাংক এবং সমবায়সমূহই কৃষি ঋণের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হতো । এ সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রায় ১০০ টি শাখা গ্রামীণ ও কৃষি ক্ষেত্রে তাঁদের দুই হাজারের বেশী লোকবলের মাধ্যমে অর্থায়ন পরিচালনা করছিল। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা ছিল তুলনামুলকভাবে কম । তবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঋণ প্রবাহের জন্য এই দশকেই সরকারী ব্যাংকগুলো শাখা বিস্তার শুরু করে । সত্তরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে গ্রামীন ও কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিকে চাঙা করার মানসে ব্যাংকের শাখার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় । স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারের গ্রামীণ ও কৃষি ভিত্তিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের প্রবাহ বাড়তে থাকে এবং খাদ্যশস্য খাত বিশেষ প্রাধান্য পেতে শুরু করে। তথাপি এ দশকে কৃষি ঋণের মূল সূত্র ছিল অপ্রাতিষ্ঠানিক ও গ্রামীণ মহাজন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের প্রভাব আশির দশকের শুরুতেও ছিল বেশ প্রকট। আন্তর্জাতিক খাদ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বাংলদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর ১৯৮২ সালের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায় যে, এসময় ৬২ ভাগ গ্রামীণ পরিবার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করতো, আর মোট ঋণে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের অবদান ছিল ২৫ ভাগ। আশির দশকে নিয়মতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কৃষি ঋণের মূল সূত্র ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক- সোনালি, জনতা এবং অগ্রণী ব্যাংক, এবং বিশেষায়িত ব্যাংক- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক। এ সময় ব্যাংক এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় আর একটি সদ্য প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ গ্রামীন উন্নয়ন সংস্থার (বিআরডিবি) মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষি ঋণের বিস্তারে উদ্যোগী হয়। এ দশকের শেষের দিকে এর সাথে যুক্ত হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। আশির দশকের শুরুতে সরকারি ব্যাংকের শাখার সংখ্যা দাড়ায় ৩৮০০ এর উপরে আর এই শাখা বিস্তারে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই মূলতঃ ভূমিকা রাখে, যা ছিল মোট ব্যাংকিং শাখার প্রায় ৮৮ শতাংশ । শাখা বিস্তার গ্রামীণ ও কৃষি অর্থায়ন কাঠামোকে বিস্তৃত করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখা সমূহ সবচেয়ে বেশি কৃষি অর্থায়নে ভূমিকা রাখছিল যার শাখা এবং লোকবলের সংখ্যা এসময় দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬৫০ এর অধিক এবং প্রায় সাত হাজার। এক দশকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ৭০ হাজার থেকে ৪ লক্ষে উন্নীত হয়। ১৯৭২-৭৩ সালের ১০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ ১৯৮২-৮৩ তে ২৭০ কোটি তে উন্নীত হয়। এ দশকের শেষের দিকে ১৯৮৭ সালে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কৃষি ব্যাংকের শাখা গুলো নিয়ে একটি আলাদা বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। আশির দশকেও ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাথে সাথে সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি খাতে পুনঃ অর্থায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল । এ দশকে কৃষি খাতে মন্দ ঋণও বেশ জোরে শোরে পুঞ্জিভুত হতে শুরু করে এবং কৃষি ঋণের গুণগত মান এর উন্নয়নে বিশেষ নজরদারি পরিলক্ষিত হয়। মন্দ ঋণের প্রভাবে এসময় সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কিছু গ্রামীণ শাখা বন্ধও করা হয়েছিল।
বাংলাদেশে গ্রামীণ ও কৃষি খাতে অর্থায়নের একটি নতুন এবং উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের শুরু হয় আশির দশকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব ও বিকাশের মধ্য দিয়ে। ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম বেশ দ্রুত গতিতে বিস্তারিত হতে শুরু করে এই দশকেই এবং গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক এবং আশা সহ বেশকিছু ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ও কৃষি অর্থায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে শুরু করে। বিশেষ করে হাঁসমুরগি, গবাদিপ্শু, ও মাছ চাষে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ জোরেশোরে এগিয়ে আসে। সাধারণতঃ শস্য ঋণ ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ঋণ ক্ষেত্র না হলেও মোট ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শস্যখাতেও প্রদান করা শুরু হয় ।
নব্বই দশকের শুরু থেকে ব্যাংক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি কৃষি ঋণ নীতি ও অবকাঠামোর আওতায় নিজস্ব কৃষি ঋণ প্রকল্প প্রণয়ন ও তাঁর বাস্তবায়ন শুরু করে, যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণয়ন করে আসছিল। নব্বই দশকের মাঝামাঝি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখা ৮৫০ স্পর্শ করে এবং মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কৃষি মন্দ ঋণের পরিমাণ বেশ বৃদ্ধি পায়, এবং সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে কৃষি খাতে অর্থায়নের মাত্রা কমিয়ে আনে।
নব্বই দশকে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত ছিল। নব্বই এর দশকের শুরুতে, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে গতি আনয়নের লক্ষ্যে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) প্রতিষ্ঠা গ্রামীণ ও কৃষি অর্থায়নে কাঠামোগত পরিবর্তন আনে এবং নতুন মাত্রা যোগ করে। সরকার প্রতিষ্ঠিত এই অ্যাপেক্স প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে (পার্টনার বা অংশীদারি প্রতিষ্ঠান) কৃষি ও ব্যবসা উন্নয়নে ঋণের বিস্তার শুরু করে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিআরডিবির কৃষি ঋণের গতি বিংশ শতকের প্রথম দশকে কিছুটা শ্লথ ছিল। বিশেষায়িত ব্যাংক গুলোর কৃষি ঋণের মূল অংশ সব সময়েই ছিল শস্য ঋণ। এ দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এর শাখার সংখ্যা হাজার এ পৌছায় এবং ঋণ বিতরণ এর পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা; এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এর শাখার সংখ্যা ৩৫০ অতিক্রম করে। রাষ্ট্রীয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর পুনঃ অর্থায়নের উপর এ বিশেষায়িত ব্যাংক দুটোর নির্ভরতা স্পষ্ট ছিল । এ দশকের মাঝামাঝি সময়ের তথ্য অনুসারে, এ দুটো ব্যাংক এ সময় কৃষি খাতে মোট ব্যাংক ঋণের দুই তৃতীয়াংশ বিতরণ করেছিল। তবে কৃষি খাতের মন্দ ঋণের সমস্যা এ দশকেও ব্যাংকগুলোর উদ্বেগ এর কারণ ছিল, এবং যার ফলস্বরূপ এ দশকের শুরু থেকে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণে তাঁদের ঋণ বিতরণের হার কমিয়ে আনে। তবে কৃষি ক্ষেত্রে অর্থায়নে ব্যাংক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য ২০০৮-০৯ সাল থেকে বেসরকারি এবং বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংক সমুহকে কৃষি ঋণ কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এর কৃষি ও গ্রামীণ অর্থায়ন নীতিমালা অনুসারে, যে সকল ব্যাংকের শাখা পল্লী অঞ্চলে অপ্রতুল তাঁরা ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের সেবা ব্যবহার করে কৃষি অর্থায়নে অংশ নিতে পারে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রসারের সাথে সাথে এ দশকেও কৃষি অর্থায়নে তাঁদের অবদান প্রসারিত হতে থাকে, আর এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার প্রয়াস শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের শুরু থেকে। এর ফলে , ২০০৬ সালে ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বা এমআরএ । এ দশকের তথ্যানুসারে, পিকেএসএফ তার অংশীদারি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বেশ কিছু ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গবাদিপশু, মাছ চাষ, শস্য ও হাঁসমুরগি সংক্রান্ত ক্ষুদ্র কৃষি ব্যাবসায় অর্থায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
বর্তমান দশকে কৃষি ঋণের একটি বিস্তৃত অবকাঠামো পরিলক্ষিত হয়। বর্তমান দশকের শুরুতে বাংলাদেশের সরকারী ৪টি ব্যাংক, ২টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৩০ টি বেসরকারি ব্যাংক, ৯ টি বিদেশী ব্যাংক, বিআরডিবি, ও সমবায় ব্যাংক মিলে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ঘোষিত কৃষি ও পল্লী ঋণের ৯৭ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিল । এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এর পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচীর আওতায় বর্গা চাষিদের বিশেষ কৃষি ঋণ বিতরন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে ব্যাংকের হোলসেলিং এ ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমে কৃষি অর্থায়ন, এবং বিদ্যুৎ সুবিধা বিহীন এলাকায় সৌরশক্তি চালিত সেচ পাম্প ও গবাদি খামারে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ সুবিধা প্রসারিত হয়।এ দশকের আরও উল্লেখযোগ্য দিক হল যে, এ সময়ের মধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক আলাদা কৃষি ঋণ বিভাগ বা উপ বিভাগ গঠন ও দক্ষ জনবল নিয়োগ করে কৃষি অর্থায়ন কার্যক্রমের অবকাঠামো তৈরি করতে সমর্থ হয়। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষ বছরে আমরা ব্যাংকিং খাতের সমস্ত ব্যাংকগুলোকে কৃষি অর্থায়ন বাবস্থায় আওতায় দেখতে পাচ্ছি । বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ কর্মসূচির আওতায় লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে থাকে এবং ২০২০ -২১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিশেষায়িত অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩০ ভাগ। এছাড়া দেশের ৬ টি সরকারী ব্যাংক, ৮ টি বিদেশী ব্যাংক ও ৩৯ টি বেসরকারি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে যা ২৬০০০ কোটি টাকার উর্ধ্বে। দেশের ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ অর্থায়নের আওতায় ও নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে সরাসরি অথবা ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার সাহায্যে কৃষি ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া কৃষি অর্থায়নে বিআরডিবি এবং বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
‘এম আরএ’ এর আইনি কাঠামোর আওতায় ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষি ও পল্লী ঋণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বেশ কিছু ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফ এর অর্থ ব্যবহার করে কৃষি ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারি অর্থের পাশাপাশি পিকেএসএফ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার তহবিল কৃষি বাণিজ্য উন্নয়নে্র অর্থায়নে ব্যবহার করছে।
ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সার্বিক অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় বিবর্তন আনছে এবং কৃষি খাতেও পরিবর্তন আসছে । মোবাইল ব্যাংকিং ইতিমধ্যে গ্রামীন ও কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। সামনের দিনগুলোতে এজেন্ট ব্যাংকিং এর বিকাশ ও সফলতা কৃষি অর্থায়নের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষি বীমা উন্নয়নে কাজ চলছে। সঠিক পণ্য মূল্য নির্ধারণ ও কৃষি বাজারজাতকরনের জন্য ‘কৃষি পণ্য এক্সচেঞ্জ বা বাজার’ প্রতিষ্ঠা সামনের দিনের এজেন্ডা হতে পারে যা কৃষি অর্থায়নেও বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করি।